ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৩/০৩/২০২৫ ১০:৩৫ এএম

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে বন্ধ রয়েছে ইউএসএআইডির তহবিল। এমন পরিস্থিতিতে ভোগান্তিতে পড়ছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। তহবিল স্থগিত হওয়ার কারণে রোহিঙ্গা শিবিরের অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শরণার্থী শিবিরে সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বেশ কিছু গুরুতর রোগী, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধরা চরম সংকটে পড়েছেন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তৎকালীন সংকটকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক সাহায়তায় তারা স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছিল। এই সহায়তা স্থগিত হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে আগের মতো কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়নি। এর ফলে, কক্সবাজারের শিবিরে চিকিৎসার জন্য আসা অনেক রোহিঙ্গা এখন চিকিৎসার অভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত মো. হাসান নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনা অভিযানে আমি এক পা হারিয়েছি। আর অন্য পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আমি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিতাম, কিন্তু এখন ওই সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি এখন হতাশ, আমার স্বপ্ন এক পায়ে দাঁড়ানোর ছিল। কিন্তু এখন আমার সেই আশা নিঃশেষ হয়ে গেছে।

হাসানের মতো অনেক রোহিঙ্গাই ফিজিওথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে তাদের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শরণার্থী শিবিরে থাকা মো. কবির আহমেদ বলেন, পক্ষাঘাতগ্রস্ত আমার ছেলেকে নিয়ে রয়েছেন। তিনি জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের সিডিডি সেন্টারে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমি জানি না কোথা থেকে আমার ছেলের চিকিৎসা করাবো। এটা আমাদের জন্য এক মহা দুঃসময়।

শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, এ বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিত হওয়ার পর তিনটি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। আরও দুটি হাসপাতাল মার্চের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া, প্রতিবন্ধী রোহিঙ্গাদের জন্য পরিচালিত ১৪টি সিডিডি সেন্টারও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার রোহিঙ্গা সেবা পেতেন। স্বাস্থ্যসেবা ছাড়া বর্তমানে তাদের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কম রিসোর্স দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের সেবা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় রোগীরা খুবই কঠিন সময় পার করছেন।

তহবিল স্থগিত হওয়ার কারণে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক কর্মী ছাঁটাই হয়েছে, যার ফলে সেবা হ্রাস পেয়েছে। আর এ কারণে স্থানীয় জনগণেরও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ কমে গেছে। আইনজীবী ও শরণার্থী সেবা কর্মী সৈয়দ মো. তাফহিম জানান, ক্যাম্প ও হোস্ট কমিউনিটিতে জীবন রক্ষাকারী সেবাসহ স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন, শিক্ষা এবং জীবিকা অর্জনের নানা সেবা বিঘ্নিত হয়েছে। বৈদেশিক সাহায্য স্থগিতের কারণে কিছু জরুরি সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। যা রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কমিউনিটিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সেবা নিশ্চিত করতে তহবিল সহায়তা পুনরায় শুরু হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং রোহিঙ্গা শিবিরে সহায়তা পুনরায় শুরু করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। যার কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা জনগণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তার স্থগিতাদেশের ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন, পানি সরবরাহ এবং জীবিকা অর্জনের নানা কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেছে। সুত্র, পাহাড়সমুদ্র

পাঠকের মতামত

উখিয়ায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসনে অভিযান

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রুখতে মাঠে নেমেছেন উখিয়া উপজেলা প্রশাসন। ...

উখিয়ার ওসি এলেন চকরিয়ায়

সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশের পর সন্ধ্যায় কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে। বদল হয়েছে ...